Thursday, June 10, 2021

সত্যের পরাজয় [ছোটো ছোটো চিন্তারা]

  • 10. June.21
মুসলমানেরা যখন জাগতিক জ্ঞান ও উপায় উপকরণে গরীব আর তাওয়াক্কুলে খোদায় ছিলো ধনী, তখন তারা ছিলো দুনিয়ার অজেয় পরাশক্তি জাতী।
আবার, যখনই তারা জাগতিক জ্ঞান ও উপায় উপকরণে ধনী হয়ে সেসবের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লো, এবং মৃত্যুকে ভয় করতে শুরু করলো,
তখন থেকেই তাদের গলায় গোলামির শিকলে লাগতে শুরু হয়।।
শত্রুর দেওয়া ফর্মুলায় মুসলমানেরা জ্ঞানবিজ্ঞানে তো বেশ এগিয়েছে তাতে কী মুক্তি বা বিজয় পেয়েছে, নাকি গোলামির ইতিহাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হচ্ছে!

আবার কেউ কেউ দ্বীনের জন্য জাগতিক যশখ্যাতি আর অর্থবিত্তের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে এবং যারা এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে তাদেরকে নিন্দা করছে। আসলে এই লোকগুলো নিজেরাই দ্বীনের নামে নিজেদের ধোকা দিচ্ছে এবং শয়তানের জিঞ্জিরে আবদ্ধ হচ্ছে টের পাচ্ছেনা। এজন্য আমি বলি দুনিয়ার অর্থবিত্ত, যশ-খ্যাতি, বড়ো বড়ো ডিগ্রি অর্জনের প্রতিযোগিতা পরকালীন সফলতার সামনে একেকটা দেয়াল।
আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার দামেশকের জামে মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেনঃ ‘হে দামেশকবাসীগণ! তোমরা কি একজন সহানুভূতিশীল, হিতাকাঙ্খী ভাইয়ের কথা শুনবে? শুনে নাও, তোমাদের পূর্বে অনেক বিশিষ্ট লোক অতিক্রান্ত হয়েছে। তারা প্রচুর ধন-সম্পদ একত্রিত করেছিল, সুউচ্চ দালান-কোঠা নির্মাণ করেছিল এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা তৈরী করেছিল, আজ তারা সবাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাদের গৃহগুলোই তাদের কবর হয়েছে এবং তাদের দীর্ঘ আশা ধোঁকা ও প্রতারণায় পর্যবসিত হয়েছে। ‘আদ জাতি তোমাদের নিকটেই ছিল। তারা ধন, জন, অস্ত্রশস্ত্র ও অশ্বাদি দ্বারা দেশকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছিল। আজ এমন কেউ আছে কি, যে তাদের উত্তরাধিকার আমার কাছ থেকে দু’দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করতে সম্মত হবে?’ [ইবনুল মুবারক আয-যুহদ ৮৪৭; কুরতুবী] হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ ‘যে ব্যক্তি জীবদ্দশায় দীর্ঘ আকাঙ্খার জাল তৈরী করে, তার আমল অবশ্যই খারাপ হয়ে যায়।‘ [কুরতুবী] অর্থাৎ মানুষের আশা-আকাংখা, লোভ-লালসা এতবেশী যে, সে তার পিছনে এতই মগ্ন থাকে যে, তার জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে অথচ তার আশা পুরোয় না। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্দর উদাহরণ পেশ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার কোন বিশিষ্ট একটি ঘর আঁকলেন। তারপর তার মধ্যভাগ থেকে একটি রেখা এঁকে তা বৃত্তের বাইরে নিয়ে গেলেন। তারপর এ রেখার বাইরের অংশে ছোট ছোট কতগুলো রেখা আড়াআড়ি ভাবে মাঝ বরাবর আঁকলেন এবং বললেনঃ “এটা (মধ্যবিন্দু) হলো মানুষ, আর এর চারপাশে যে রেখা তাকে ঘিরে আছে দেখা যাচ্ছে সেটা তার আয়ু। আর যে রেখা বাইরের দিকে চলে গেছে সেটা তার আশা-আকাংখা। আর এই যে, ছোট ছোট রেখাগুলো আছে সেগুলো তার বিপদাপদ বালা-মুসিবত। যদি কোন একটি থেকে বেঁচে যায় অপরটি তাকে জাপটে ধরে। তারপর এটা থেকে বেঁচে গেলেও অপরটি তাকে ঠিকই ধরে ফেলে। [বুখারীঃ ৬৪১৭]
  • 24.July.21
মানুষ যখন পরাজিত হয়, তখন নিজেদের দ্বীনকেও সন্দেহের চোখে দেখে এবং আপন বিশ্বাস নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে (আমার দ্বীন যদি সত্যিই হয়ে থাকে তাহলে পরাজিত হলাম ক্যা!)।
অপরদিকে এরা শত্রুপক্ষের বিশ্বাস, কৌশল, কৃষ্টি কালচার সহ সবকিছুকে মহান ভাবতে শুরু করে সেসবের অনুসরণ করতে চায়।
কারণ, পরাজিতরা মনে করে শত্রুদের বিশ্বাস ও আদর্শ সত্য বা উন্নত বা বিশেষ এমন কিছু বলেই তো তারা জয়ী হয়েছে।

এই ভুল দর্শন, পরাজিতদের গোলামির ইতিহাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই করতে থাকে।

  • জানুয়ারি,২১  

অসত্যের বিজয়োল্লাস আর দাঁত কেলানো হাসি , যেন আমাদের সত্য বিশ্বাসের গায়ে চির না ধরায়।

নীচ চোরদের পরমাহলাদের উলুধ্বনি আর জয়োৎসবে, যেন গৃহস্থের সততাময় হৃদয়ে সন্দেহের বীজ বপন না হয়।

রাজনীতির বুঝাপড়ার আড়ালে যেনো, জয়ী ডাকাতদের বন্দনায় লিপ্ত না হই।

সত্যও মাঝেমধ্যে পরাজিত হয়, তাই বলে সত্যকে ত্যাগ করা যায়না।
  • 27.July.21
সত্যের আলটিমেট পরাজয় নেই ঠিক, তবে মাঝেমধ্যে সত্যেরও পরাজয় হয়।
যেমন, সত্য পরাজিত হয়েছে একাত্তরে, বালাকটের প্রান্তেরসহ 'সত্য' ইতিহাসের নানান বাঁকে।
এজন্য সত্য পরাজিত হয় বলে কোনো সত্যাশ্রয়ী সত্যের পক্ষাবলম্বন থেকে সরে জয়ী অসত্যের পক্ষে নারা দিতে পারেনা।
কারণ, পরাজয়ও আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা, তিনি দেখতে চান পরাজয়ের কঠিন মুহূর্তে বান্দাহ কতটা সবর করে সত্যকে আঁকড়ে ধরে থাকে।
Suraia Akhter Tumpa, Saifullah Mohammad Tufayal and 103 others
22 Comments
1 Share
Like
Comment
Share

22 Comments

  • AbūSamīhah Sirājul-Islām
    বিউটিফুল।
    সত্য পরাজিত হয় না, সত্যপন্থীরা ময়দানে বিপর্যয়ের স্বীকার হয় মাত্র।
    সত্যপন্থীদের পরাজয় হয় তখন, যখন তারা ময়দানে বিপর্যয়ের পরে নিজেদের সত্য অবস্থান থেকে সরে যায়।
    15
    • Love
    • Reply
    • 6w
    • Rakib Hasan
      ঠিক বলেছেন ভাই।
      সত্যপন্থী লিখতে চেয়েও ইচ্ছে করে লিখলাম না, বিশেষ উদ্দেশ্যে।
      সত্য বা সত্যপন্থীদেরও আল্লাহ পরাজয় দেন(ময়দান ছেড়ে দেওয়ার কারণে কিংবা স্রেফ পরীক্ষার জন্য), এই বাস্তবতা ভুলে যাওয়া হচ্ছে বলে মনে হয়েছে, এবং এটা ভুলেও যাওয়া আমাদের জন্য বিপদ হত… 
      See More
      3
      • Like
      • Reply
      • 6w
    • Rakib Hasan
      অনেকে মনে করেন 'সত্য' হলে তার পরাজয় হবে কেনো। এই চিন্তা থেকেই 'পরাজিত সত্যে'র পক্ষের অবস্থানকে নিন্দা করে এবং অসত্যকে আসল সত্য বা বাস্তবতা হিসেবে তুলে ধরতে চায়, এটা একটা কঠিন সংকট বলে মনে করি।
      1
      • Like
      • Reply
      • 6w
    View 1 more reply
  • Sakib Mahdi
    চমৎকার আলাপ তুলছো
    1
    • Love
    • Reply
    • 6w
    • Rakib Hasan
      অনেকে মনে করেন 'সত্য' হলে তার পরাজয় হবে কেনো। এই চিন্তা থেকেই 'পরাজিত সত্যে'র পক্ষের অবস্থানকে নিন্দা করে এবং অসত্যকে আসল সত্য বা বাস্তবতা হিসেবে তুলে ধরতে চায়, এটা একটা সংকট।
      1
      • Like
      • Reply
      • 6w
  • Noman Khurshed
    আলহারবু সিজাল যুদ্ধ হচ্ছে বালতিতে থাকা পানির মতো একবার এপাশ তো আরেকবার ওপাশ।
    • Like
    • Reply
    • 6w
  • Shafiul Alam
    সুন্দর আলোচনা।
    1
    • Love
    • Reply
    • 6w
    • Rakib Hasan
      ধন্যবাদ ভাইজান
      • Like
      • Reply
      • 6w
  • Sumiya Diba
    দারুন লেখা !
    1
    • Love
    • Reply
    • 6w
  • Mir Tanbin Rupak
    লেখার মুল উদ্দেশ্যেটা ব্যপক তবে উদাহরণ টা সংশোধন প্রয়োজন,, ৭১ আর বালাকোট আদর্শিকভাবে আকাশ/পাতাল পার্থক্য,,,, এক খারাপের সাথে অন্য খারাপের দ্বন্দ্ব আর ইসলামিক জিহাদ এক নয়!
    1
    • Like
    • Reply
    • 6w
    • Rakib Hasan
      একাত্তরে বাম ও সেক্যুলাররা ছিলো ইসলাম বিরোধী সন্ত্রাসী এবং তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে সাম্যবাদী রাষ্ট্র কায়েমের জন্য এবং এদের বিরুদ্ধে যেসব ইসলামী দল ও ব্যক্তিরা অস্ত্র ধরেছে বা বিরোধিতা করেছে তারা হক ছিলো।
      2
      • Like
      • Reply
      • 6w
    • Mir Tanbin Rupak
      Rakib Hasan হ্যা আল বদর, আল শামস তেমনি সংগঠন ছিল! ৭১ এ ভিন্ন ভিন্ন সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে অস্ত্র ধরেছিল, এ জন্যই বললাম "বালাকোট" আর ৭১ এক সাথে লেখাটা মানানসই নয়
      • Like
      • Reply
      • 6w
  • Habibur Rahman
    একাত্তরে সত্য কী? তার মানে পাকিস্তান সরকার ইসলামের পক্ষে, হকের পথে ছিল?
    • Like
    • Reply
    • 6w
    • Rakib Hasan
      অবশ্যই পাকিস্তান সরকার ইসলামের পক্ষের ছিলো কিন্তু ইসলামী ছিলোনা।
      কিন্তু যারা দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে ছিলো।
      ইসলাম বিরোধী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই 'হক' ছিলো। যে 'হক' ওলামায় কেরাম সহ অধিকাংশ দেশপ্রেমিক নাগরিকেরা বুঝেছে।
      আপনাকে বুঝতে হবে, কোথাও ইসলামের অনুশাসন পুরোপুরি না থাকলে সেখানে অনিয়ম জুলম থাকবেই, তাই বলে কেউ অস্ত্র হাতে নিয়ে সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শত্রুর সাহায্য নিয়ে খুনাখুনি শুরু করে দিতে পারেনা, এভাবে যারা খুনাখুনিতে লিপ্ত হয় তারা সন্ত্রাসী এবং তাদেরকে নির্মূল করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব।
      3
      • Like
      • Reply
      • 6w
      • Edited
    • Habibur Rahman
      Rakib Hasan পাকিস্তান ইসলামের পক্ষে ছিলো, ইসলামি ছিলো না। এটা একটা হাস্যকর লজিক। হাস্যকর অবস্থান। রাষ্ট্র হয় ইসলামি হবে, নাহয় অনৈসলামি। মুজাবজাবিন বা মাঝামাঝি কোনো পথ নেই। মাঝামাঝি আছে নেফাকি। পাকিস্তান জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত সেই মুনাফিক দ্বারাই শাসিত হয়েছে (ইল্লা মাশাআল্লাহ)। আপনাদের মতো কিছু লোক ইসলামের পারসেপশন না বুঝে এসব আকামের লজিক দাঁড় করান।
      কোনো আলেম এ নিয়ে পাকিস্তান সাপোর্ট দেননি যে পাকিস্তান ইসলামের পক্ষে। তারা পাকিস্তান সাপোর্ট দিয়েছেন ভারতের ভয়ে। এটা তাদের ইজতিহাদ।
      আর অস্ত্র কারও হাতেই ছিল না। কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী হামলা ছিল না। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের আগে কোথাও কোনো বিদ্রোহ হয়নি। এসব আকামের গল্প বলে লাভ নেই। আন্দোলন হয়েছে। সেটা ছিল ক্ষমতার লড়াই। সেই লড়াইয়ে তারা হেরেছে। হারার স্বাস তুলতে গেছে নিরীহ মানুষের উপর অস্ত্র চালিয়ে। যে নেজামে ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলো। সেই দলের সভাপতি ও সেক্রেটারিও সোজাসুজি পাকিস্তানের জুলুমের কথা স্বীকার করেছে। এ দেশে একমাত্র জামায়াত তাদের পশ্চিমা পাকিস্তানের নেতাদের জেদাজেদির ফলে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। সেটারে আপনারা এই যে বৈধ করার প্রচেষ্টা চালান ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে। দেখলে খারাপ লাগে। ইসলামের চোখে সেই আইয়ুব ইয়াহইয়া আর বর্তমান হাসিনার মাঝে ফারাক কী? বলেন তো শুনি।
      2
      • Like
      • Reply
      • 6w
      • Edited
    • Imam Hossain Rakib
      Habibur Rahman এই ইগো থেকে জামায়াত এখনো বের হয়ে অাসতে পারেনি। এটা তাদের অনেক বড় ব্যর্থতা।
      1
      • Like
      • Reply
      • 6w
    • Tareq Bin Mahmud
      Habibur Rahman ৭১ এ যারা কতল হয়েছে তারা কি শহীদ? হাকিকি না হুকমি?
      • Like
      • Reply
      • 6w
    • Habibur Rahman
      Tareq Bin Mahmud হাকিকি তো না। বাট হুকমিরটা নিয়তের উপর নির্ভরশীল