"দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার ভিতর দিয়েই বাংলাদেশে মৌলবাদী ইসলাম টিকে আছে এবং আরও বহুদিন টিকে থাকবে। এরা প্রগতিশীল বাংগালী জাতীয়তাবাদের ঘোরতর প্রতিপক্ষ। দেশে এক ও অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা থাকলে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটত। মাদ্রাসা থেকে অনিবার্যভাবে তৈরি হয় ধর্মান্ধ মানুষ ও মৌলবাদী দলের কর্মী। সাধারণ স্কুল- কলেজ থেকেও তা হতে পারে। কারণ মৌলবাদী নেতারা অনেকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। মসজিদের ইমাম, জেহাদি সংগঠনগুলোর সদস্য, ইসলাম প্রচার সংঘগুলোর নেতাকর্মী অবধারিতভাবে মাদ্রাসা থেকেই আসে। অল্প-শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষেরা এদের দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হয় এবং সমাজে সাম্প্রদায়িক চেতনা চাংগা হয়। আমাদের চিন্তা ও জীবনে অগ্রগতি আনতে চাইলে আমাদের তর্ক করতে হবে"।
ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর পরম হিতাকাঙ্ক্ষী আবুল মকসুদের প্রয়াণে আমরা শোকে হতাহত!
[আল্লাহর বান্দাহদের জাহেলিয়াতে অন্ধকার থেকে বের করে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ দ্বীনে দাখিল করানোর লক্ষ্যে যে দল কায়েম হয়েছে, সে দল যখন কোনো বিশেষ প্রাণের প্রয়াণে শোকাভিভূত, তখন দেখতে হয় তিনি আসলে ইসলামের কেমন বন্ধু ছিলেন।]
১। ধর্মান্ধ মৌলবাদীগোষ্ঠী যতই চেষ্টা করুন, বাংলাদেশ কখনো আফগানিস্তান-পাকিস্তান হবে না।
এখনো #জামায়াতের ভোটার ৪-৫ পার্সেন্টের বেশি হবে না। এই ধর্মান্ধ শক্তিকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর আরও ভূমিকা রাখা উচিত। জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, #জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যেই চিহ্নিত করেছে। তাদের নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি।
#আবুল মকসুদের সাক্ষাৎকার
(দৈনিক আমাদের অর্থনীতি/ ৩ মার্চ ২০১৫)
২। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘একাত্তরের চেতনা পুনর্জাগরণের জন্য গণজাগরণ মঞ্চ যে আন্দোলনের সূচনা করেছে, সে আন্দোলনের মৃত্যু নাই। #জামায়াত-শিবিরের যারা একাত্তরে গণহত্যায়, নারী ধর্ষণে, জ্বালাও-পোড়াওয়ে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ভোটের রাজনীতির কারণে যদি কেউ আঁঁতাত করতে চান, তাহলে তা হবে লক্ষ লক্ষ মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।’
#যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে 'টালবাহানা' বন্ধের দাবি
[প্রথম আলো/২৮ জুন ২০১৩ ]
৩। "দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার ভিতর দিয়েই বাংলাদেশে মৌলবাদী ইসলাম টিকে আছে এবং আরও বহুদিন টিকে থাকবে। এরা প্রগতিশীল বাংগালী জাতীয়তাবাদের ঘোরতর প্রতিপক্ষ। দেশে এক ও অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা থাকলে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটত। মাদ্রাসা থেকে অনিবার্যভাবে তৈরি হয় ধর্মান্ধ মানুষ ও মৌলবাদী দলের কর্মী। সাধারণ স্কুল- কলেজ থেকেও তা হতে পারে। কারণ মৌলবাদী নেতারা অনেকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। মসজিদের ইমাম, জেহাদি সংগঠনগুলোর সদস্য, ইসলাম প্রচার সংঘগুলোর নেতাকর্মী অবধারিতভাবে মাদ্রাসা থেকেই আসে। অল্প-শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষেরা এদের দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হয় এবং সমাজে সাম্প্রদায়িক চেতনা চাংগা হয়। আমাদের চিন্তা ও জীবনে অগ্রগতি আনতে চাইলে আমাদের তর্ক করতে হবে"।
- সৈয়দ আবুল মকসুদ,
'বাঙালি জাতি, বাঙালি মুসলমান, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশ", চতুরঙ্গ পত্রিকা, বর্ষ ৬৩, সংখ্যা ১-২, ২০০৩-২০০৪, পৃঃ৬৮
৪।
১০/০৫/১১ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘সংবিধান সংশোধন খুব সাবধান’ শিরোনামে একটি কলাম লিখেছিলেন। তার কিছু অংশ তুলে দিলাম,
-“আমি মুখে বলা ছাড়াও সংক্ষেপে লিখিতভাবে কয়েকটি পয়েন্ট দিয়েছি। তাতে বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ও ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হবে যাবতীয় কার্যাবলির ভিত্তি’ বর্জন করার পরামর্শ রয়েছে।”
-“ধর্মভিত্তিক রাজনীতি অত্যন্ত জঘন্য রাজনীতি। তা উদার গণতান্ত্রিক আদর্শের শত্রু। তা মানুষে-মানুষে বিভেদের জন্ম দেয়। সংহত জাতি গঠনের পথে তা শক্ত বাধা।"
তা ছাড়া বাস্তবতা হলো, এখনো ইসলামি মৌলবাদী রাজনীতির (#জামায়াতে ইসলামী) সমর্থক বাংলাদেশে পাঁচ-ছয় শতাংশের বেশি নয়, যদিও সমাজে ধর্মীয় গোঁড়ামি পর্যাপ্ত।
-“জামায়াত ও ইসলামি দলগুলো মানুষের শাসন মানে না। তারা আল্লাহর আইন চায়। অথচ মানুষ ও রাষ্ট্র নিয়েই সংবিধানের কারবার।”
৫। ২৯ জুন ২০১০ সালে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় জামায়াত নেতৃবৃন্দ এরেস্ট হওয়ার পর তিনি প্রথম আলোতে 'ভাবিতে উচিত ছিলো প্রতিজ্ঞা কথন' শিরোনামে একটা কলাম লিখেন। সেখানে জামায়াত নিয়ে এভাবে মন্তব্য করেন,
"বর্তমান জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ৯০ শতাংশেরই বয়স ৫০-এর নিচে। তাদের এখন একটি ইসলামী বিরােধী দল হিসেবেই গণ্য করতে হবে।"
৬। এছাড়াও, ভাষা আন্দোলনে ভাষা সংগ্রামী কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহার ভূমিকা শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আবুল মকসুদের উপস্থিতে দিলীপ বড়ুয়া বলেন,
"দেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের কর্মকাণ্ড এবং জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদী কার্মকাণ্ডকে নিশ্চিহ্ন করে চিরতরে বিদায় দিতে হবে"
৭। মজার বিষয় হল, একসময় তিনি শেখ মুজিবের শাসন আমলের সমালোচনা করতে গিয়ে আফসোসের সাথে বলেন,"রাস্ট্রের জন্মের শুরুতেই রাস্ট্রের একনায়কত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়"
কিন্তু এই একই লোক ১৮০° ঘুরে গিয়ে (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সড়ক ভবনে আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শেখ মুজিবের ভূয়সী প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন,
‘অনেকেই বলেন তিনি (বঙ্গবন্ধু) মহান নেতা কিন্তু প্রশাসক হিসেবে তিনি ততটা সাফল্যের পরিচয় দেননি। আমি মনে করি, এটা একটা অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি।
নানা রকম প্রতিবন্ধকতা, পাকিস্তানের নানা রকমের শত্রুতা, এসবকে মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর স্বীকৃতি আদায় করেছেন। কাজেই তার যে জীবন ও কর্ম সেগুলো আলোচনা পর্যালোচনা হওয়া দরকার। সেগুলো থেকেই শিক্ষা নিতে হবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম জাতির নেতার কাছ থেকে আদর্শ যদি গ্রহণ করতে না পারে তাহলে অগ্রসর হওয়া কঠিন।'
উপরের লেখাগুলো দিয়ে দেখিয়েছি, জামায়াত যার জন্য শোকাহত হলেন, তিনি কতটা জামায়াতের শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন এবং ইসলাম ও মুসলমানের কেমন বন্ধু ছিলেন!
জামায়াত তার শোকবানীতে বলেছেন,
"তিনি দেশে বাক-স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করেছেন"
উপরের এই বাক্যে যা আছে তার প্রায় পুরোটা অসত্য।
বরং আমরা সকলে জানি তিনি এই ফ্যাসিস্ট রেজিমের কত উঁচু মাপের সমর্থক বুদ্ধিজীবী ছিলেন।
সর্বশেষে জামায়াতকে বলতে চাই,
এভাবে শোকবার্তা না দিয়ে চুপ থেকেও মৃত ব্যক্তিকে সন্মান জানানো যায়।
জামায়াত এভাবে স্রোতে গা না ভাসিয়ে আরও বেশি চিন্তাশীল হবে এমনটাই আশাকরি। অভ্যান্তরে থাকা সংস্কারপন্থীদের প্রেসারে পড়ে এভাবে ধোঁকায় পড়া ঠিক হবেনা। স্মরণে রাখতে হবে শহীদদের, শহীদদের খুনিদের এবং চিনতে হবে ইসলামের দুশমনদের।
জামায়াতের এটা ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে, তারা ইসলামের তাগিদে ও আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার তাড়নায় রাজনীতি করে, রাজনীতির প্রয়োজনে ইসলাম করেনা।
জামায়াতকে গণ মানুষের সংগঠন বানানোর নামে, এই আধ্যাত্মিক দলটিকে প্রাণহীন বুর্জুয়া দলে রুপান্তরিত না করার অনুরোধ