আপনি যদি ট্রল করতেই চান, তাহলে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান থেকে শুরু করে মুফতি কাজী ইবরাহিম পর্যন্ত প্রায় সবার বক্তব্য নিয়ে ট্রল করা সম্ভব। এমনকি তাদের অনেকের বক্তব্যে পেশকৃত তথ্য যাচাই-বাছাই বিহীন হওয়ায় তাদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা এবং অনেক ক্ষেত্রে আকিদা বিরোধীও প্রমাণ করে তাদেরকে ফাসিক ফাতওয়া দিতেও আপনার খুব বেগ পেতে হবেনা।
কিন্তু আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাইকে নিয়ে ট্রল বা হাসিঠাট্টা করার মতো কুৎসিত কবিরা গুনাহে লিপ্ত হতে পারেনা।
নবী (সা.) উপহাসকারীদের সম্পর্কে বলেছেন : ‘একজন উপহাসকারীর জন্য বেহেশতের দরজা খুলে দেয়া হবে এবং তাকে বলা হবে : ‘এস।’ সে তার দুঃখ ওঅসহায়ত্ব নিয়ে সামনে অগ্রসর হবে এবং যখন সে ভেতরে প্রবেশ করতে চাইবে তখনই তার সামনে বেহেশতের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।’ [কানজুল উম্মাল,৮৩২৮]
আল্লাহ বলেছেন :
وَلِلَّـهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ
‘সম্মান কেবল আল্লাহ,তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্য।'
রাসূল সাঃ তাঁর বিদায় হজ্জের ভাষণে উম্মতকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ মনে রেখো, তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের #ইজ্জতকে আল্লাহ এমন পবিত্র ঘোষণা করেছেন যেমন পবিত্র আজকের দিন, এ শহর এবং এ মাস।[বুখারি]
আপনারা যারা মানুষের ভুল নিয়ে উপহাস ও হেয় করেন তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে নিকৃষ্ট জালিম,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
‘হে বিশ্বাসিগণ! কোন ব্যক্তি যেন অপর কোন ব্যক্তিকে উপহাস না করে,হয়তো তারা তাদের অপেক্ষা উত্তম এবং নারীদেরও একদল যেন অন্য দলকে উপহাস না করে,হয়তো তারা তাদের অপেক্ষা উত্তম। তোমরা নিজেদের (মধ্যে একে অপরের) ত্রুটি অন্বেষণ করবে না এবং কাউকে কদর্য নামে সম্বোধন করবে না। কারণ,বিশ্বাস স্থাপনের পর (কাউকে) কদর্য নামে ডাকা গর্হিত কর্ম,যারা এ কর্ম হতে নিবৃত্ত না হয় প্রকৃত পক্ষে তারাই অবিচারক।’
একটু চারপাশে চোখ বুলালে দেখবেন, উপরে আল্লাহ্ কর্তৃক বর্ণিত জালিমের অনেক আলামত বহু ইসলামিস্টদের মধ্যে খুঁজে পাবেন। আবার, তাদের অনেকে সরাসরি উপহাস না করলেও উপহাস ও গালির দোকান খুলে দিয়ে তামশা দেখছে আর বুঝাচ্ছে তিনি খুব নিখুঁত মুমিন। অথচ, একজন আলেমকে দেয়া গালির পাপের একটা অংশ তার আমলনামায় যুক্ত ভয়ে ভীত হওয়া উচিৎ ছিলো।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
‘মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং তাকে হত্যা করা কুফরী।’ [ইবনে মাজা/৩৯৩৯]
কোনো মুসলমান ভাই থেকে ভুল বা অসার কিছু প্রকাশিত হলে, তা যদি একান্তই ক্ষতির কারণ হয় তাহলে সেই ভুলকে ভুল হিসেবে প্রমাণ করে দেওয়া উচিৎ কিন্তু
ভুল প্রমাণ করতে গিয়ে 'অপমান করা বা গালি দেয়ার' মতো ফাসেকিতে লিপ্ত হওয়া উচিৎ নয়।
‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহি.) বলতেন, "اتقوا المزاح، فإنه حمقة تورث الضعينة"
‘তোমরা ঠাট্টা ও কৌতুক থেকে সাবধান থাক, কেননা তা হলো নির্বুদ্ধিতা, যা বিদ্বেষ ও শত্রুতা ছড়িয়ে দেয়।
তিনি অন্য এক জায়গায় বলেন,
"اتقوا المزاح، فإنه يذهب المروءة"
‘‘তোমরা ঠাট্টা ও কৌতুক থেকে সাবধান থাক, কেননা তা ব্যক্তিত্বকে নিয়ে যায়।’’
সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস বলেন,
"إقتصر فى مزاحك، فإن الإفراط فيه يذهب البهاء، ويجرىّ عليك السفهاء"
‘তুমি ঠাট্টা ও কৌতুক কম কর, কেননা তা বেশি করা সৌন্দর্য ও জ্যোতিকে নিয়ে যায়। আর তোমাকে নির্বুদ্ধিতার উপর ছেড়ে যায়।’
তাই আমাদের উচিৎ নয় কাউকে নিয়ে ট্রল করা কিংবা অপমান করা এটা যেমনি ফাসেকি তেমনই ব্যক্তিত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ। আবার অনেকে নিজের বড়ত্ব প্রকাশ করতে মানুষকে নিয়ে হেয়া-তামাশা করে।
এর মানে এই নয় যে, কারো ভুল ধরা যাবেনা, ভুল অবশ্যই ধরা যাবে কিন্তু ভুল ধরতে গিয়ে অপমান, হাসি-তামাশা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা বা হেয় করার জন্য বিভিন্ন উপনাম দেওয়া যাবেনা, দিলে আপনি আল্লাহর দৃষ্টিতে জালিম হিসেবে গণ্য হবেন।
আল্লাহ্ আমাদেরকে জালিম হওয়া থেকে হিফাজত করুন। আমিন।
- Mahmuda Khatun, Atikul Islam Liman and 154 others