Saturday, March 14, 2020

শহীদ হাফেজ নজরুল: যার শাহাদাত প্রেরণার


শহীদ নজরুল ২০১৪ সালে পুলিশের নির্মম বুলেটের আঘাতে একটি চোখ হারিয়ে, যখন ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসে, তখন কিছুদিন সে আমার বাসায় থাকায়, তার সাথে কিছুটা মেশার সৌভাগ্য হয়েছিলো। তাকে প্রথম দেখেই খুব কষ্ট পাই কিন্তু কথা বলে এবং তার ইমানী জজবা দেখে মনে হলো, চোখ হারালেও এ নিয়ে তার কোনো ব্যাথা-চিন্তা নেই বরং আল্লাহর রাহে একটি চোখ কোরবানি করতে পেরে আনন্দিত। এবং এই অল্প সময়ে তাকে মনে হয়েছিলো শাহাদাতের চেতনায় উজ্জীবিত ইসলামী আন্দোলনের এক নিবেদিতপ্রাণ কর্মী।

কিন্তু আমিতো জানতাম না, আমার সামনে বসে থাকা চোখহারা ভাইটিকে, আল্লাহ্‌ অতিশীঘ্রই শাহাদাত দিয়ে খুবাইব-হানজালার মিছিলে শামিল করে নিয়ে মনোমুগ্ধকর জান্নাতের সবুজ পাখি হিসেবে কবুল করে নিতে যাচ্ছে।

প্রিয় মুজাহিদ ভাইটি, যে চোখ দিয়ে দেখে দেখে কুরআন মুখস্ত করেছে, তারা প্রথমে সেই চোখ শহীদ করে দেয়। কিন্তু তারা বুঝেছে চোখের আলো নিবিয়ে দিয়েছি ঠিক কিন্তু সিনা থেকে কুরআন তো মুছে দিতে পারিনি। তাই তারা বুকের দু'পাশে গুলি চালিয়ে বুক ঝাঁজরা করে দেয়।

মূলত তারা, হাফেজ নজরুলকে শহীদ করেনি, শহীদ করেছে একটি জীবন্ত কুরআনকে।

ঘাতকদল ভেবেছে হাফেজ নজরুলকে ব্যার্থ করে দিয়েছে। অজ্ঞরা জানেনা, তারা বরং তাকে সফলদের কাতারে শামিল করে দিয়েছে।

আমরা জানি, কাফিরের বল্লম দেহকে এফোঁড়ওফোঁড় করে দেওয়া সাহাবী রাঃ চিৎকার দিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, فزت ورب الكعبة[ক'বার রবের কসম আমি সফল হয়ে গেলাম]


আপসোস! আজ আমাদের হাতে এমন কোনো অস্ত্র নেই যা দিয়ে আমাদের ভাইয়ের শাহাদাতের বদলা নিতে পারি। তবে, আমাদের নিকট এমন এক ভয়ংকর অস্ত্র আছে যা দুনিয়ার কোনো খুনি তাগুতের কাছে থাকেনা।

রাসূল সাঃ বলেছেন, الدُّعَاءُ سِلاَحُ الْمُؤْمِنِ [দু'আ হলো মুমিনের অস্ত্র]

তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, আল্লাহ্‌ তুমি, খুনি, খুনের পরিকল্পনাকারী, এবং খুনের জন্য প্ররোচনা দাতা মিডিয়াসহ সকলকে তোমার আসমানি আজাব দিয়ে হালাক করে দাও, গজব দিয়ে নিঃশেষ করে দাও, এমন প্রলয়ংকর অভিশাপ নাজিল করো যা আর কখনো ফিরে না যায়, জন্তু-জানোয়ারের মতো তাদেরকে শেষ করে দাও, তাদের জীবনকে যন্ত্রণাময় করে দাও এবং তাদের নিজেদের মাঝে হানাহানি সৃষ্টি করে দাও যেনো নিজেরা নিজেদের খতম করে দেয়।


আল্লাহ, আমরা দূর্বল তাই প্রতিশোধ দায়িত্বভার তোমার হাতে শপে দিলাম। আজাবের জন্য তুমি এদের গুনেগুনে রাখো।

আজ এইসকল ঘাতকদের মনে হচ্ছে অনেক ক্ষমতাধর, কিন্তু অতীতে এরচেয়েও অধিক ক্ষমতাধরদেরকেও আল্লাহ্‌ মাটিতে গেড়ে পেলেছে, ইন্নালিল্লাহ বলার মতোও কেউ ছিলোনা।

وَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ هِيَ أَشَدُّ قُوَّةً مِّن قَرْيَتِكَ الَّتِي أَخْرَجَتْكَ أَهْلَكْنَاهُمْ فَلَا نَاصِرَ لَهُمْ

যে জনপদ আপনাকে বহিস্কার করেছে, তদপেক্ষা কত শক্তিশালী জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি, অতঃপর তাদেরকে সাহায্য করার কেউ ছিল না।[47:13]

وَتِلْكَ الْقُرَىٰ أَهْلَكْنَاهُمْ لَمَّا ظَلَمُوا وَجَعَلْنَا لِمَهْلِكِهِم مَّوْعِدًا

-ঐসব জনপদ ও তাদেরকে আমি ধংস করে দিয়েছি, যখন তারা জালেম হয়ে গিয়েছিল এবং আমি তাদের ধ্বংসের জন্যে একটি প্রতিশ্রুত সময় নির্দিষ্ট করেছিলাম।

আল্লাহর রাসুল সাঃ বিরে মাউনার মর্মান্তিক ঘটনার পর যেভাবে এক মাস যাবৎ কাফির খুনিদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সমীপে বদ দু‘আ করতে থাকেন, আমাদেরও উচিৎ কুনুতে নাজেলা পড়ে, হাফেজ নজরুলের খুনিদেরকে অবিরাম অভিশাপের তীর বর্ষণ করা।


পরিশেষে বলব, প্রিয় শহীদ নজরুল! তুমি সৌভাগ্যবান, সম্ভবত নিম্নোক্ত ঘোষণা তোমারই জন্য,

سَلَامٌ عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ ۚ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ

তোমাদের সবরের কারণে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর তোমাদের এ পরিণাম-গৃহ (জান্নাত) কতই না উত্তম।

[13:24]


#শহীদ_নজরুল_ইসলাম