সিজদা খুবই দামি ইবাদত ও সালাতের গুরুত্বপূর্ণ পার্ট। আল্লাহর নিকটে পৌছে যাওয়ার অন্যতম সিঁড়ি। আল্লাহ্ বলেছেন "সিজদা দাও আর আমার নিকটবর্তী হয়ে যাও" মুমিন যখনই দুঃখ মসিবতে নিপতিত হয় তখনই সে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে কান্নাকাটি করলে আল্লাহ্ মসিবত থেকে আসান করে সুহাসিনী ভোরের উদয় করে দেন।
কিন্তু শুধু সিজদায় পড়ে থাকাই নামাজ নয়। মাঝেমধ্যে বুকটান করে বীর দর্পে দাঁড়িয়ে [ক্বিয়াম] যাওয়াও ইবাদত ও নামাজের গুরুত্বপূর্ণ পার্ট। না দাঁড়ালে সালাতও পূর্ন হয়না বরং সিজদাও অর্থহীন হয়ে পড়ে।
ক্লান্ত দেহ নিয়ে সিজদায় বেশিক্ষণ থাকলে তন্দ্রা থেকে ঘুমের ঢলে হারিয়ে যাওয়ারও আশংকা থাকে বেশ, তাতে নামাজ তো হারাবেনই সাথে অযুখানাও যাবে।
এই ছবি আজকের নির্জীব নিস্তেজ আরব সহ সারা মুসলিম জাহানের প্রতিচ্ছবি। যারা তাদের হারানো অতীত ও গোলামির শৃঙ্খল থেকে আজাদ হতে সিজদাকেই একমাত্র তরীকা হিসেবে বেছে নিয়েছে, আর সেই সুযোগে হিংস্র জানোয়ারেরা সিজদাওয়ালাদের ঘাড়ে পা রেখে বিশ্বের দরবারে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে মানবতার গলে খঞ্জর চালাচ্ছে। আর সিজদাওয়ালারা সিজদারত অবস্থায়ই একদিন রুহ কবজ হয়ে যায় কিন্তু দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে দিয়ে কিরাত করার আর চান্স মেলেনা। এমনকি তাদের লাশকে সতকার করার মতোও কাউকে পাওয়া যায়না।
অথচ বোকার দলেরা যদি একবার হিম্মতের সাথে আইউবী (রহঃ) এর ন্যায় হুংকার দিয়ে দাঁড়িয়ে যেতো, তাহলে দেখতে পেতো ওরা ঘাড় থেকে ছিটকে ভূমধ্যসাগর সাগরের পাশে থাকা পাথরে মস্তক বিদীর্ণ হয়ে সলীল সমাধি হতো। আর মানবতা পেতো মুক্তির অকৃত্তিম সাধ।
তারা পেতো বিজেতার সাধ কিংবা প্রাণ করতো শহীদী সুধা।
]
مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا [٣٣:٢٣]
মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি। (সুরা আহযাব,৩৩:২৩)]
কিন্তু আজ মুসলিম উম্মাহ শতবৎসর ধরে খিলাফতের ছায়া থেকে বঞ্চিত, রাষ্ট্র নামক জাতীয়তাবাদের নিষ্ঠুর দেয়াল আমাদের করেছে শতশত টুকরো। পরিচয় এখন আঞ্চলিক পরিচয়ে।
এরপরেও যারা আবার বিশ্বমানবতার অভিভাকত্বের জন্য খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে শরীক তাদেরও থাকতে হয় ভয়ে তটস্থ।
কখনো সেই ভয় বারুদের কামানের গর্জনের
আবার কখনো ফাতওয়া কামানের গোলার ।
বিপ্লবীদের পথে বড় বাধা বারুদের কামানের নয় বরং ফাতওয়া কামানের। বারুদ আপনার দেহকে জ্বালিয়ে দিতে পারবে কিন্তু আপনার বিশ্বাসকে নয়।
কিন্তু ফাতয়ার কামান আপনার বিশ্বাসের দেহকে এফোঁড়ওফোঁড় করে দিয়ে বিশ্বাসের রাজপ্রসাদে কম্পন ধরিয়ে দিতে সক্ষম।
আমরা যদি মানবতার ঘাড় থেকে ভুত নামিয়ে আল্লাহ্র রুবুবিয়াত প্রতিষ্ঠা প্রচেষ্টায় শৈথিল্য প্রদর্শন করে কিয়ামের কথা ভুলে শুধু সিজদা দিয়েই নিজের দায়িত্বের ইতি টানি তাহলে আমাদের জন্য আল্লাহ্র ঘোষণা, আমাদের স্থলে আল্লাহ্ অন্যকাউকে এনে দিবেন যারা আল্লাহ্কে ভালোবেসে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে আর আল্লাহও তখন তাদের ভালবেসে নুসরা ও বিজয় দান করবেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ
হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি দীন থেকে ফিরে যায়, (তাহলে ফিরে যাক ), আল্লাহ এমনিতর আরো বহু লোক সৃষ্টি করে দেবেন, যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন এবং তারা আল্লাহকে ভালবাসবে, যারা মুমিনদের ব্যাপারে কোমল ও কাফেরদের ব্যাপারে কঠোর হবে, ৮৭ যারা আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা করে যাবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবেনা ৷ এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে চান তাকে দান করেন৷
[মায়েদাঃ৫৪]
আল্লাহ একদিন না একদিন জুলুমাতের অবসান ঘটাবেনই যেহেতু এদের চাইতেও বড়বড় জালিমকে বালিচাপা দিয়ে দিয়েছেন। আর এদের জন্যেও রয়েছে হালাক্বের নির্দিষ্ট একটি ক্ষণ।
﴿وَتِلْكَ الْقُرَىٰ أَهْلَكْنَاهُمْ لَمَّا ظَلَمُوا وَجَعَلْنَا لِمَهْلِكِهِم مَّوْعِدًا﴾
এ শাস্তিপ্রাপ্ত জনপদগুলো তোমাদের সামনে আছে, এরা জুলুম করলে আমি এদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম এবং এদের প্রত্যেকের ধ্বংসের জন্য আমি সময় নির্দিষ্ট করে রেখেছিলাম৷ [সূরা কাহাফ: ৫৯]
وَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ هِيَ أَشَدُّ قُوَّةً مِّن قَرْيَتِكَ الَّتِي أَخْرَجَتْكَ أَهْلَكْنَاهُمْ فَلَا نَاصِرَ لَهُمْ
হে নবী, অতীতের কত জনপদ তো তোমার সে জনপদ থেকে অধিক শক্তিশালী ছিল, যারা তোমাকে বের করে দিয়েছিল৷ আমি তাদের এমনভাবে ধ্বংস করছি যে, তাদের কোন রক্ষাকারী ছিল না
[সূরা মুহাম্মদ:১৩]
কিন্তু জুলুম থেকে মুক্তি পেতে এবং দিতে আপনি আমি নিজেকে কতটুকু শামিল করতে পেরেছি সেই প্রচেষ্টায় সেটাই বিবেচ্য এবং বিচার্য।
আসুন না আমরাও নিজেদেরকে মানবতার মুক্তির সেই মিছিলে শামিল করে নেই।
সিজদা ও কিয়াম উভয় দিয়েই সালাতের পূর্ণতা দেই।